বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এ জন্য বিএনপিকে বিরাট মূল্য দিতে হয়েছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদ উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে বোধহয় একটা রায় হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। এটার জন্য আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, অনেক প্রাণ দিয়েছি। আমাদের ৬০ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম-খুন হয়েছে। চাকরি-ব্যবসা হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, এগুলো তো আর ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। আজকে কেয়ারটেকার সরকার থাকলে আমরা এ অবস্থায় থাকতাম না। সবকিছু ধ্বংসের পেছনে হচ্ছে একটি অনির্বাচিত সরকার শেখ হাসিনা আর ১৪-১৫ মাস ধরে আরেকটা অনির্বাচিত সরকার এখনো চলছে। তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রবর্তন হওয়াতে আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের একটা ফল আমরা পেয়েছি। তবে যেহেতু এটা আগামী নির্বাচন থেকে শুরু হবে, আমি অনুরোধ করবো বর্তমান সরকারকে এটা মাথায় রেখে, বর্তমান সরকারকে কেয়ারটেকার সরকারের আদলে পরিচালিত করতে হবে। যেহেতু ওনারা অন্তর্বর্তী সরকার, কেয়ারটেকার সরকার আগামী নির্বাচন থেকে শুরু হবে, বর্তমান সরকারকে এটা মাথায় রাখতে হবে। এটাই বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা। যারা নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবেন তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আমি অনুরোধ করবো—কেয়ারটেকার সরকারের আদলে এখন থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সরকার পরিচালনা করুন। কোনো বড় সিদ্ধান্ত বা অন্য সিদ্ধান্তে আপনাদের যাওয়া উচিত হবে না। আপনারা পুরোপুরি নির্বাচনের দিকে যান এবং নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকাটা পালন করেন। তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করার পর দেশের মানুষের মধ্যে যে বিশাল পরিবর্তন, প্রত্যাশা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, এটাকে যদি আমরা ধারণ করতে না পারি তাহলে কোনো রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যত নেই। আগামী নির্বাচনে বিএনপি যদি সরকার গঠন করতে পারে, ঐ ধারণাগুলো (জিয়াউর রহমান যেভাবে দেশ চালিয়েছিলেন) আবার ফেরত নিয়ে আসবো। সেটার ভিত্তিতে আমরা এখন সব কাজ করতেছি। আগামী দিনের স্বাস্থ্য খাত কীভাবে হবে, শিক্ষা খাত কেমন হবে, কর্মসংস্থানের জন্য কী হবে, পরিবেশের জন্য কী হবে, মহিলা ও শিশুদের জন্য কী হবে...সেই ফাউন্ডেশনের ওপর আমরা আবার আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি। এরই মধ্যে আমাদের কাজ প্রায় সমাপ্তির দিকে। প্রত্যেকটি নাগরিককে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দেশের পরিবর্তনের সঙ্গে অংশীদার হতে হবে এবং এটার বেনিফিট তার কাছে যেতে হবে। আমীর খসরু বলেন, বিএনপির এখন যতগুলো কর্মকাণ্ড চলছে বিভিন্ন জায়গায়, আমরা কিন্তু একটা প্রশ্নোত্তর পালা রাখছি। অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য এটা করা হচ্ছে। আমাদের প্রায় সব জায়গায় প্রশ্নোত্তরের একটা পালা আছে। এ বিষয়টা আমরা ইচ্ছে করেই করছি। রাজনীতিবিদদের জনগণের প্রশ্নোত্তর ও জবাবদিহি করতে হবে, এটাই হচ্ছে রাজনীতি। বিএনপির এ নেতা বলেন, যেই গণতন্ত্রের কথা বলছি, সেটাকে সফল করতে হলে যদি জবাবদিহিতা আনতে না পারি, যদি রাজনীতিবিদরা প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়, তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এরপরে রাজনীতিতে সহনশীলতা থাকতে হবে। অপরের সঙ্গে আপনি দ্বিমত পোষণ করেও, তার মত-কে সম্মান জানাতে হবে। এই সংস্কৃতি যদি আমরা আনতে না পারি, তাহলে শত সংস্কার করেও কোনো পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে, আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, বিএনপি কিন্তু প্রতিত্তোরে সেই ভাষায় যাচ্ছে না। আমরা (বিএনপি) কিন্তু এগুলো গ্রহণ করছি, হজম করছি। তবে আমরা আমাদের ভাষায় কথা বলছি, আমরা রাজনীতির ভাষায় কথা বলছি। আমরা গণতন্ত্রের ভাষায় কথা বলছি। এটা আমাদেরকে ধারণ করতে হবে এবং এটাই হবে আগামীদিনের বাংলাদেশের রাজনীতি। আমরা সবাই আগামী নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচনকে বানচাল, বাঁধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত করার জন্য সকল ধরনের অপচেষ্টা চলছে। বিএনপি কিন্তু ধৈর্যসহকারে একজন প্রশিক্ষিত বিজ্ঞ নাবিকের মতো চলছে। সমুদ্রে ঝড়, তুফান যা-ই আসুক, একজন বিজ্ঞ নাবিক যেরকমভাবে জাহাজকে চালায়, তারেক রহমানের নেতৃত্ব আমরা কিন্তু সেভাবে নেভিগেট করছি। আমীর খসরু বলেন, আমরা কিন্তু বড় পিকচার দেখছি। ছোটখাটো বিষয়ে আমরা দেখছি না। আর বড় পিকচারটা হচ্ছে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ হচ্ছে সবচেয়ে বড় পিকচার। সেদিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এত বাঁধা বিপত্তি আসা স্বত্বেও আমরা কিন্তু সকলে নির্বাচনের দিকে আমাদের দৃষ্টি নিবন্ধিত করেছি। সেদিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, একটি নির্বাচন হওয়ার পরে, নির্বাচিত সরকার যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকে, তাহলে দেশের এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব হবে না। বিগত ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে দেশে কোনো নির্বাচিত সরকার ছিল না এবং গত ১৪-১৫ মাসেও নির্বাচিত সরকার ছিল না। এখানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব না থাকার কারণে দেশ আজকে কোথায় যাচ্ছে সেটা বলার প্রয়োজন নেই। আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি থেকে শুরু করে সবদিকে নিম্নগামী অবস্থা। যেখানে রাজনৈতিক সমর্থন থাকবে না, সেখানে সেই সরকার জনগণের কথাও বুঝবে না এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধও থাকবে না। এছাড়া জনগণের চাহিদাও মেটাতে পারবে না। এজন্য এই নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা সকলে মিলে এই নির্বাচনকে সফলভাবে সমর্থনের মাধ্যমে আমরা দেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে চাই। একবার যদি দেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আসে এবং দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে পারি, দেশে সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা আনতে পারি, তাহলে স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারবো। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা বলেছি বিএনপি ক্ষমতায় আসলে স্বাস্থ্য খাতে বিনামূল্যে প্রত্যেক নাগরিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার সাথে আমরা কারিগরি শিক্ষাটা স্কুল থেকেই শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা ১ কোটি কর্মসংস্থানের ওয়াদা করেছি আঠারো মাসে। আমরা কিন্তু আত্মকর্মসংস্থানের উপরও জোর দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়নের কথা আমরা বলছি, এটা কিন্তু কেউ কোনোদিন বলেনি। রাজনীতিকে গণতন্ত্রের কথা সবাই বলে। কিন্তু অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়ন করে এটার বেনিফিট মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, প্রত্যেকটি মানুষ অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া...যে নতুন অর্থনৈতিক মডেল আমরা চিন্তা করছি, এটা শুধু রাজনীতি নয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
তত্ত্বাবধায়কের আদলে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান খসরুর
- আপলোড সময় : ২১-১১-২০২৫ ০৬:৪৭:৩২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২১-১১-২০২৫ ০৬:৪৭:৩২ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার